একটা ব্রেক-আপ আর তারপরে

-      এভাবে চলেনা। চলতে পারেনা।
-      কি? মানে?
-      আমি তোকে আগেও অনেকবার অনেকরকম ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তুই কোনোদিনই পাত্তা দিসনি আমাকে। শুধু নিজের কথাটুকুই শুনিস।
-      উমম।
-      অসহ্যকর। আমি যখন কিছু বলি তখন তোর এই চুপ করে থাকা আমি নিতে পারিনা। এমনি সময় তো অনেক আজেবাজে কথাই বলিস।
-      বলনা... ভালো লাগছে শুনতে।
-      মানে? আমি কি বক্তৃতা দিচ্ছি নাকি মীরাক্কেল করছি?
-      না... মানে, তোর কাছে বকুনি খেতে আমার খুব ভালো লাগে।
-      থাম। আমি কবে থেকে বলছি ডাক্তার দেখাতে? এতো বিচ্ছিরি কাশি হচ্ছে তোর শুনলেই মনে হচ্ছে বাইশ নয় বিরাশি বছর বয়স হয়ে গেছে।
-      উনন... তোর বকুনি খাবার জন্য আমি একটা গোটা জীবন অসুস্থ থাকতে পারি। ডাঃ দেখালেই তো সুস্থ হয়ে যাব। তখন কি এখনের মতো আমাকে নিয়ে চিন্তা করবি?
-      নাহ! নাহ! আর নয়। I’m breaking up with you.
-      কি?
-      আমার মুখের কথায় কিছুই হচ্ছেনা যখন। আমার থাকা আর না থাকা তোর কাছে দুটোই সমান সেটা আমি বুঝেছি। তাই আমি না থাকাটাই বেছে নিলাম।
-      Can you please repeat that particular word once?
-      হ্যাঁ। আমি আর তোর সাথে থাকতে পারছিনা। তোর সাথে থাকলে আমিই কোনদিন অসুস্থ হয়ে পরব। I think break up could be the last solution.
-      ওহ।
-      কিছু বলার নেই তো তোর?
-      কি আর বলব! তুই বোধহয় আজ শুধুই তোর সিদ্ধান্ত জানাতে এসেছিলিস।
-      মাঝেমাঝে মনে হয় আমার কোনো গুরুত্বই নেই। তার থেকে এই ভালো ,যে আমার কথা শোনেনা আমিও তার কাছে থাকবোনা।
-      ব্রেক আপ কথাটা কত সহজ ,তাইনা?
-      সহজ, কঠিন এতো জানিনা। শুধু জানি I’m ending all these.
-      আজকাল দেখি মানুষ কেমন ট্রাঞ্জিস্টটারের মতো হয়ে গেছে। আর তাদের অনুভূতিরা সুইচের মতো। সুইচ অন করলেই আমরা একসাথে আছি, হাসছি, গাইছি, প্রেম করছি, ভালোবাসছি। আর অফফ করলেই সব ভ্যানিস। অন আর অফফের মাঝে আর কিছুই নেই। সবকিছু শেষ করতে এক মিনিটও লাগে না ব্রাক আপ নামের শব্দটার।
-      এতো কথা বলছিস অথচ নিজের দোষটা মেনে নিচ্ছিসনা। ডাঃ দেখাতে যাবার কথাটা বনলতে পারছিনা।
-      আচ্ছা ডাঃ না দেখালে তুই আমাকে ছেড়ে দিবি। আর তুই ছেড়ে দেবার পরে আমার কি হবে সেটার দায়িত্ব তোকে আমি দেবো না। তোর চলে যাওয়াই যদি সমাধান হয়ে থাকে তাহলে কেন ভাবছিস আমাকে নিয়ে?
-      বাজে কথা বলা ছাড়া আর কিছু শিখেছিস?
-      অথচ আমরা সম্পর্ক শুরুর সময় কেউই কাউকে কাছে আসতে বলিনি। শুধু অনুভব করেছিলাম আমরা একসাথে থাকতে ভালোবাসি। তারও অনেক পরে বুঝেছিলাম তুই আস্তে আস্তে আমার সমস্ত ফাঁকা ভরিয়ে দিয়ে নিজের অধিকার দাবী করছিস।
-      কাঁদবি না একদম।
-      আচ্ছা তুই তো জানিস তোর মুখে এতো কঠিন কথা আমি মেনে নিতে পারিনা? ‘ব্রেক আপ’! কত ছোট শব্দ অথচ কত ক্ষমতা দেখ। বলতেও GST লাগেনা।
-      ডাক্তার দেখাবি না তাহলে। তাইতো?
-      দেখাবোনা কক্ষন বলেছি?
-      কবে?
-      আসলে ডাঃ দেখানোর আগেরদিনই আমি ঠিক হয়ে যাই। তাই জন্যই তো...
-      উফফ! ভগবান কি শুধু আমাকেই পেয়েছিলেন বেছে বেছে?
-      হি হি... আসলে উনি জানেন তুই ছাড়া আমাকে কেউ সামলাতে পারবেনা।
-      বদমাইশিগুলো রাখ। আমার চিন্তাটা বোঝ। কাছে তো থাকিস না। কি করে বুঝবি তোর কিছু হলে আমি কি করবো বলতো?
-      কবে নিয়ে যাবি?
-      এখানেও সঙ্গে আমাকেই যেতে হবে?
-      নিশ্চই। দায়িত্ব নিতে শেখ আস্তে আস্তে। সারাজীবন কি শুধুই ব্রেক আপের হুমকি দিয়ে যাবি?
-      চুপ। ওই শব্দটা আর বলতে হবেনা।
-      কেন? তুই প্রথমে বলেছিস।
-      তুই বলবি না।
-      আচ্ছা তুই যদি সত্যিই চলে যাস আমি কি করবো?
-      সত্যিই। কি করবি বলতো?
-      এই শহর আমাকে একদিন তোকে দিয়েছিল। প্রান ভরে শহরের গন্ধ নেবো। মাঝরাতের কলকাতা দেখতে বেরবো।
-      হুম। ব্যাস? এইটুকুই? আর কিছু করবিনা?
-      তোকে নিয়ে কবিতা লিখবো। বাস্তবে তো তুই আমার হলি না। অন্তত চিরকাল তোকে ডায়রির পাতায় বন্ধ করে রাখবো। কল্পনায় তুই আমার একার।
-      বুঝলাম। আর কিছু?
-      হ্যাঁ। ঠিক একমাস পরে তোর যে বন্ধু আমাকে লাইন মারে, ওকে হ্যাঁ বলে দেবো।
-      কি? তোর মনে এই ছিল?
-      হেহ হে...
-      বাজে মেয়ে। কাছে আয়...
-      কাছেই তো থাকতে চাই। চেয়েছিলাম।
-      আমি কি চলে গেছি নাকি? কাছেই তো আছি। আমার চিন্তা হওয়াটা বুঝলি না।
-      এইভাবেই তো বলতে পারতিস। ওতো শক্ত কথাটা কিকরে বললি আমায়? Heartless!
-      আচ্ছা। ভুল হয়ে গেছে। ব্রেক আপ ক্যান্সেল। আয় চুমুযাপন করি।
-      হ্যাঁ শুধু ওটাই তো জানিস।
-      “সন্ধ্যেবেলা ঝগড়া  হবে, হবে দুই বিছানা আলাদা
হপ্তা হপ্তা কথা বন্ধ মধ্যরাতে আচমকা মিলন্
পাগলী, তোমার সঙ্গে ব্রহ্মচারী জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে আদম ইভ কাটাব জীবন। ”
-       অসভ্য!
-      “পাগলী, তোমার সঙ্গে আশাপূর্ণা জীবন কাটাব
আমি কিনব ফুল, তুমি ঘর সাহাবে যাবজ্জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোঝড় জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ‘ভোর ভয়ো’ কাটাব জীবন। ”
-      কাটাস। সারাটাজীবন যেভাবে ইচ্ছে শুধু আমার সাথেই কাটাস।