নারী, তুমি কার?
নারী, তুমি কার?
প্রশ্ন করলাম বলে ভেবো না উত্তর দিতেই হবে তোমায়!
হাজার হাজার বছর ধরে তোমায় আসামীর মতো দাঁড় করানো হয়েছে কাঠগোড়ায়।
অপরাধ না করেও উত্তর দিয়ে গেছ তুমি...
বা হয়তো, কখনো দোষ ঢেকেছো অন্যের!
আজ নাহয় তোমার হয়ে কটা প্রশ্ন করি তোমাকেই?
নারী, তুমি কার?
যার ঔরসে জন্ম তোমার,
যার ছায়ার নীচে বড় হয়ে উঠতে চেয়েছ, তার?
নাকি যার গৃহিণী হয়ে সামলেছো সংসার, তার?
যাকে ধারণ করেছো তুমি,
দুশো ছয়টা হাড় ভেঙে গুঁড়ো হবার যন্ত্রণা সহ্য করেও,
যাকে নিশ্বাস নিতে শিখিয়েছো তুমি!
তোমার বহন করে আনা সেই অংশ, তবে কি তুমি তার?
বলো নারী, কার হয়ে বাঁচতে চাও তুমি?
মাইলের পর মাইল হেঁটে যার সংসারের জন্য জল তুলে নিয়ে আসো, তার?
যে পুরুষ মনে করে তোমার অধিকার শুধু রান্নাঘর আর আঁতুড়ঘর, তার?
নাকি যে সমাজ তোমায় আজও দেয়নি শিক্ষার অধিকার, বুদ্ধির অধিকার,
তার হয়ে বাঁচতে চাও তুমি?
যে পিতা, তুমি নারী হবার অপরাধে তোমায় খুন করতে চায়,
তোমার নাড়ি ছেঁড়া যে সম্পদ, শুধু তুমি অচল হয়ে যাওয়ায় ফেলে দেয় রাস্তায়!
তার জন্যে? সেই পুরুষের হয়ে বাঁচবে তুমি?
বলো নারী, কার হয়ে বাঁচতে চেয়েছ বারবার?
তোমার সেই জন্মদাতা পিতার হয়ে?
নাকি সেই পুরুষের হয়ে, যে আজীবন তোমার ভাত আর কাপড়ের দায়িত্ব নেবার শব্দ
দিয়েছিল!
যে তোমায় লুকিয়ে তোমার মতন আরেক নারীর সঙ্গী হয়েছিল!
নারী, আজও যে তোমায় ঝলমলে পোশাকে আর উজ্জ্বল ঠোঁট পালিশ লাগিয়ে দাঁড়াতে হয়
লাইনে!
আজও রাতে নিজেকে বিক্রি না করলে এই তিলোত্তমা তোমায় দেবে না একটা অন্নের
দানাও!
নারী! তবু বুঝি তুমি পুরুষেরই হতে চাও?
তোমার নিশ্বাসের অধিকারটুকুও দিয়ে দিতে চাও সেই পুরুষকেই!
তবু যদি সে পুরুষ তোমার হতো!
কেন বাঁচবে তুমি এ সমাজের হয়ে?
এ সমাজ যে শুধুমাত্র পুরুষ চেটিয়া!
এ সমাজ যে এখনো তোমার সতীত্ব বিচার করে!
জানতে চায় সামাজিক বন্ধনের আগেই তুমি অন্য পুরুষের শয্যাসঙ্গী হয়েছ কিনা!
এ সমাজের জন্যই যে আজও এক কুমারী মাকে বিসর্জন দিতে হয় তার সন্তান!
তবু যে তুমি মা! বছরের পর বছর ধরে বয়ে আসা সমস্ত গরলকে ধারণ করে যাচ্ছ, তুমিই!
তাইতো রোজ রাতে কোনো ভদ্র পুরুষের দেওয়া টাকার বিনিময়ে কেনা অন্ন,
তুমিই তুলে দাও আস্তাকুড়ে পড়ে থাকা সেই নিষ্পাপ্টার মুখে!
এই সমাজ উলঙ্গ কালির পূজা করে মাতৃরূপে।
এই সমাজই মধ্যরাতে মদ্যপ হয়ে জানোয়ার বৃত্তি করে তোমার সাথে!
সেই মাতৃরূপ হয়ে যায় একটা উপভোগ্য শরীর মাত্র!
যাকে অনায়াসে অধিকার করা যায় গায়ের জোড়ে।
পাশবিক ভাবনা চরিতার্থ করার জন্য যে শরীরে কাঁটা ফুটিয়ে রক্তাক্ত করা যায়,
তুমি কি সেই শরীর হতে চাও, নারী?
নারী, তবে কি তোমার মেরুদণ্ড একটা সরীসৃপের চেয়েও দুর্বল?
আর কবে বাঁচবে তুমি, শুধু নিজের হয়ে?
তুমি যে সেই সৃষ্টি আর শক্তির মেলবন্ধন!
আদিযুগ হয়ে বহে চলা স্রোতস্বিনী গঙ্গা, সেও যে তুমিই!
তুমি যে মা! মা কি শুধু শরীর হয়?
তাই তো পাঁচ স্বামীর স্ত্রী হয়েও পাঞ্চালী আজও সতী।
তাইতো বলি নারী, বিশ্বাস করে একবার নিজেকে বিশ্বাস করে দেখো!
নিজেকে সন্মান করো নারী! তিলোত্তমা আজও তোমায় লোপামুদ্রা- মৈত্রীর
স্থান দেবে।।
Comments
Post a Comment