যাওয়া আসা
- এই যে শুনছেন!!! হ্যাঁ আপনাকেই বলছি...
- আমি? মানে আমাকে? কেন?
- কি ব্যাপার বলুন তো আপনার? রোজই দেখি আমাকে ফলো করছেন। আমি যেখান থেকে বাসে উঠি সেখান থেকে ওঠেন, যেখানে নামি সেখানেই নামেন। সারাক্ষন বাসে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। কি সমস্যা?
- না... মানে...
- কি মানে? তোতলাচ্ছেন কেন? কিছু বলার থাকলে সরাসরি বলুন। একজন ভদ্রবাড়ির মেয়েকে এভাবে বিরক্ত করতে লজ্জা করেনা? দেখে তো ভদ্রলোক বলেই মনে হয়!
- না সত্যিই... বিশ্বাস করুন... আমি কিন্তু...
- আরে থামুন মশাই! আসলে ছেলেরা হয়ই এরকম বুঝলেন তো! সুন্দরী মেয়ে দেখলেই...
- আপনি সুন্দরী!
- কি??? আপনার সন্দেহ আছে নাকি?
- ইয়ে... না, না। আপনার চোখদুটো সত্যিই ভীষণ আলাদা... মায়াবী... সুন্দর।
- হুম... শুধু চোখ?
- না... ঠোঁটের উপরে তিলটাও।
- কি??? সোজা ঠোঁটে চলে গেলেন? আপনি তো দুরন্ত এক্সপ্রেসের থেকেও বেশি দুরন্ত দেখছি। তা বাড়িতে বৌ জানেন বাইরে এইসব করে বেড়াচ্ছেন?
- বউ? কোথা থেকে আসবে? সাতাশেই লাড্ডু খেয়ে পস্তাবো?
- আচ্ছা। বউ নেই বুঝলাম, কিন্তু প্রেমিকা তো আছেই।
- প্রেমিকার বিয়েতে খাসি খেতে গেছিলাম বিশ্বাস করুন। তারপর অবশ্য আর প্রেম করা হয়নি। আপনার মতো কাউকে পেলেও নাহয়...
- ইসস! আপনি তো মশাই ভীষণ ইয়ে! সকাল সকাল খোলা রাস্তায় একজন অপরিচিতাকে লাইন মেরেই যাচ্ছেন।
- যাহ্ বাবা! আজকাল সত্যি কথা বললে দোষই হয়ে যায়।
- হুম। তা কি করা হয়?
- এইতো আইটি তে আছি। আপনার বিল্ডিং এর ঠিক উলটো দিকের টাতেই।
- ওঃ বাবা! আমি কোন বিল্ডিং এ আছি সেটাও জানা হয়ে গেছে!
- না আসলে বাস থেকে নেমে আমি তো আপনার ঠিক পিছনেই থাকি... তাই রোজই দেখতে পাই।
- হুম তা বললেন না তো ওভাবে হাঁ করে তাকিয়ে থাকেন কেন? বাসে যে আরো লোকে থাকে সেটা জানেন?
- সত্যি বলব?
- সেটাই কাম্য!
- প্রথম যেদিন আপনার মুখের দিকে হঠাৎ চোখ পড়ে গেছিল, সারাদিন শূধু আপনার কথাই ভেবেছি। আপনার মুখের মধ্যে কিছু একটা অন্যরকম আছে। একটা স্পার্ক... চঞ্চলতা। জানিনা কোনো শব্দে তাকে বর্ণনা করা যায় কি না। তাই মাঝেমাঝে চোখ চলে যায়। বিশ্বাস করুন কোনো খারাপ উদ্দেশ্য আমার নেই, ছিলও না। আপনি না চাইলে আমি আর কোনদিন তাকাবো না আপনার দিকে। আপনি চাইলে অন্য বাসে যাব।
- নাহ থাক। দরকার নেই।
- কি?
- আপনি পরপর দুদিন আসেননি কেন?
- আসলে মা আর আমার ছোট সংসার। মায়ের শরীরটা একটু খারাপ হয়েছিল। তাই মাকে ফেলে বেরতে পারিনি।
- ভালো করেছেন। কেমন আছেন কাকিমা?
- একদম সুস্থ। আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
- করুন।
- আপনি কি এটা জানার জন্যই আমাকে ডাকলেন তখন?
- কোনটা?
- এই যে আমি দুদিন আসিনি ...
- তো? তাছাড়া কি? আপনি জানেন আমার কত চিন্তা হচ্ছিল? একটা লোক সকাল সন্ধ্যে আমার আসা যাওয়ার পথে আমার সাথে যাতায়াত করে। এতোগুলো দিনে সে অভ্যাস বদলায়নি। হঠাৎ যদি অনিয়ম করে চিন্তা হবেনা?
- ওহহো... হা হা...
- হাসছেন কেন? উজবুক কোথাকার!
- আচ্ছা আপনার জীবনে প্রেম নেই?
- ছিল। কিন্তু আমার বাবা এতো বড়লোক নয়। ওদের বাড়ির চাহিদা পূরণে সক্ষম ছিল না। আর আমার কাছে আমার বাবার সম্মানের চেয়ে বড়ো আর কিছুই নয়। তাই ছেড়ে দিয়েছি।
- ভাগ্যিস!
- কি? আচ্ছা লোক তো মশাই আপনি! একজনের ব্রেক-আপ হয়েছে। সহানুভূতি না দিয়ে খুশী হচ্ছেন?
- না... পরস্ত্রীর দিকে তাকাতাম না তাহলে। এটা ভেবেই ভালো লাগছে।
- আমি কিন্তু আপনার স্ত্রীও নই।
- না... মানে, আমি ঠিক সেইভাবে বলিনি।
- অফিস কাটবেন?
- কোথায় যাবেন?
- কফি খেতে যেতে পারি। তবে বিল আমি মেটাবো।
- তা সে ঠিক আছে। কিন্তু শুধু কফিশপ? আর বাকি দিনটা?
- গঙ্গায় যাওয়া যেতে পারে। আজ রোদটা বেশ নরম।
- হ্যাঁ রাজি। আমি সারাদিন আপনার চোখের দিকে তাকিয়ে বসে থাকব।
- মানে?
- আপনার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি বুড়ো হতে চাই।
- সে কেউ তো বারণ করেনি। তবে শূনেছি সবুরে মেওয়া ফলে।
- আচ্ছা। বেশ।
- এতোগুলো দিন শুধু শূধু নষ্ট করলেন। আগে বললেই হতো। আপনি একটা আস্ত গাধা জানেন তো?
- জানি। অনেকেই বলেছে এর আগে।
- ঠিকই বলেছে। আর শুনুন এরপর অফিসে না আসলে জানিয়ে দেবেন। আমার চিন্তা হয়।
- যথা আজ্ঞা। বলছি... ইয়ে, নাম্বারটা...
- প্রথমদিনেই নাম্বার!
- যাহ্ বাবা! নাম্বার না পেলে জানাবো কিকরে? তারপর না জানিয়ে ডূব মারলে তো পরের দিন এসে ঝগড়া করবেন। আমি বেশ ঝগড়ুটে কিন্তু। আমার কপালে দুঃখ আছে।
- আমি ঝগড়ুটে! ভালো... নিজের লোকের সাথেই আমি ঝগড়া করি। এবার চলুন এগোনো যাক।
- চলুন...
Comments
Post a Comment