অসমাপ্ত



 হঠাৎ একফোঁটা বৃষ্টি এসে পড়ল মুখের উপর...আবার একফোঁটা...এরপরই বৃষ্টি এলো মুষলধারায়৷
-     -   এই ভিজবি?
-      -  পাগলী এই বৃষ্টিতে কেউ ভেজে নাকিজ্বরে পড়লে?
-      -  হ্যাঁ ভিজব...তুইও চল...ব্যাস৷ বলেই প্রতীমের হাতটা ধরে একরকম টেনে নিয়ে এলো পুজা৷
-      -  এই...ছাড় ছাড়৷ কি করছিসইশশ্ একদম ভিজে গেলাম। মাথায় নে ছাতাটা৷ পুজার মাথায় ছাতাটা ধরে প্রতীম বললচল তোকে পৌঁছে দিয়ে আসি৷
-      -  ইশশ্...আমি কি বাচ্চা মেয়ে নাকিএকা একাই যেতে পারব৷
-      -  এলেন আমার বড়ো মেয়ে৷ চল মোড় অবধি এগিয়ে দিয়ে আসি তোকে৷
 বাড়ি ঢুকতেই মায়ের একসাথে অনেকগু্লো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হল পুজাকে
      -   কিরে ভিজে ভিজে এলিদাঁড়াতে পারলিনা কোথাও?
-      না মা...প্রতীম পৌঁছে দিয়ে গেল
-      এমা বাড়ি অবধি এসেছিল নাকিতা বাড়িতে নিয়ে আসবি তোসত্যি কি বুদ্ধি হচ্ছে তোরছেলেটা সত্যিই ভালো৷
-      ওর কাজ ছিল মা৷ দাঁড়াও আমি চেঞ্জ করে আসি৷ 
      মার কাছ থেকে প্রতিমের প্রশংসা শুনেই মুখটা লজ্জায় লাল করে আপন মনেই হেসে ফেলল পুজা৷ মোবাইলটা ব্যাগ থেকে বের করে অন্ করতেই মেসেজটা ঢুকল..."কিরে বাড়ি ঢুকে কি জানাতেও নেই নাকি?"
মেসেজটা দেখেই রিপ্লাই করল পুজা..."মাকে বলছিলাম তুই মোড় অবধি পৌঁছে দিয়ে গেছিস৷ জানিস মা তোর প্রশংসা করছিল আর আমাকে বকল...তোকে বাড়ি আনিনি তাই!" সঙ্গে সঙ্গে মেসেজ ঢুকল ফোনে, "হুম ভালো ছেলে প্রশংসা তো করবেই৷"



                                       "এই আজ আসলি-না কেন পড়তেজানিসনা আমি অপেক্ষায় থাকি পড়ার দিনগুলোর জন্যে৷" ঘুম ভেঙে উঠেই মেসেজটা দেখল পুজা৷ উওর পাঠাল, "জ্বর হয়েছে রে"। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই উওর এলো, "আমি আসছি৷"
মেসেজটা ওর দেখে অর্ধেক জ্বরটা যেন সেরেই গেল পুজার৷ নিজের মনেই মুচকি হেসে ফেলল ও... কিন্তু মা ঠিক দেখে ফেলল, "কিরে হাসছিস কেনদেখি জ্বরটা...কমল কিনা?" কপালে হাত ঠেকিয়ে বলল,"বাহ্!জ্বর তো কমেছে অনেক। যাও আস্তে আস্তে উঠে মুখটা ধুয়ে নাও৷ আমি একটু গরম দুধ আনছি।"
মাকে জড়িয়ে আদুরে সুরে পুজা বলল..."উমম্৷"

                                      বাড়ির সামনে সাইকেলের বেলের আওয়াজ... "কে এলো রে?"- রান্নাঘর থেকে জিজ্ঞেস করল মা৷ 
-      দাঁড়াও মা দেখছি...মুচকি হাসতে হাসতে দরজা খুলে দিল পুজা৷ ও খুব ভালো করেই জানে কে এসেছে৷ তবু অবাক হবার ভান করে বলল, "আরে তুইআয়৷" বাড়ির ছোট মেয়ে হবার জন্য সবার খুব আদুরে পুজা। বিশেষ করে ওর বাবার, ছোট থেকেই ওর সামান্য জ্বর হলেও তিনি অস্থির হয়ে পড়তেন। পুজার মধ্যেও সেই অভ্যেসটা তৈরি হয়েছে। সামান্য জ্বরেই মাথা থেকে পা অবধি মুড়ে ফেলে নিজেকে। "একী এটা কে!!!আমার জুজুবুড়ি...চাদর-টাদর জড়িয়ে কি মিষ্টি দেখাচ্ছে ।", ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে প্রতীম। " ধ্যাতভিতরে আয়৷"
  পুজার মাকে প্রণাম করে প্রতীম জিজ্ঞেস করে, "কেমন আছো কাকিমা?  
"ভালোই রে৷ তুই কেমন আছিসবাড়ীর সবাই কেমন আছেনআসতে তো পারিস মাঝেমাঝে৷ বুড়ি তো প্রায়ই বলে তোর কথা৷ আচ্ছা তোরা ঘরে গিয়ে বস৷ আমি একটু খাবার করে আনছি।", একনাগাড়ে অনেকগুলো কথা বলেন পুজার মা। মাকে একরকম শুনিয়েই পুজা বলে, "আমাকে স্যারের নোটস্ টাও দে৷ " প্রতীম,- "হ্যাঁ দিচ্ছি৷ আজ এলিনা কেন পড়তে?"
-      আর বলিস না রে৷ এই মেয়েকে নিয়ে কম জ্বালারোজ বৃষ্টিতে ভিজছে৷ জ্বর তো হবেই৷ রান্নাঘর থেকে মা অমনি অভিযোগের সুরে বলে। "উফফ্ মা৷ তুমিও না!" আদুরে গলায় কথাটা বলেই প্রতীমকে নিয়ে নিজের ঘরে আসে পুজা। 

     "এই তাহলে আমার ছোট্ট বউটার ঘরএমাএটা কার ছবি?" স্কুল ইউনিফর্ম পরা ছোট ছোট চুল কাটা একটা ছোট মেয়ের ছবি দেখেই হেসে কুটোপাটি প্রতীম৷

-      "অ্যাই অ্যাই হাসবি না একদম৷ খারাপ হচ্ছে কিন্তু৷"- উফফ ছবিটা সরানোই হয়নি। লজ্জায় মিশে যেতে ইচ্ছে হল পুজার। না জানি প্রতঈম কি ভাবল ওকে নিয়ে। বলতে বলতেই খাবারের প্লেটটা নিয়ে পুজার মা ঘরে ঢুকল, "নে খেয়ে নে৷"

-         -   এওো!!! না কাকিমা এতো পারব না৷ 

-      পারব না কিরে?এই বয়সের ছেলেখেয়ে নে সবটা৷ বুড়ি ওকে খাইয়ে দিস সবটা৷ আমি যাই...রান্নাঘরে কাজ আছে৷

-       "হ্যাঁ মা৷", বলেই হেসে ফেলল পুজা৷ মা চলে যেতেই প্রতিম বলল , "দে খাইয়ে দে৷ "

-         -      ধ্যাতনিজে খা। আমি কেন খাওবো?

-      শুনলি না শাশুড়ি কি বললসবটা খাইয়ে দিতে!

-      এই আমার মা তোর শাশুড়ি হল কবে রে?

-      হবেই তো একদিন৷ জামাইষষ্ঠীতে যে আমার কি হবে বুঝতেই পারছি!

-      এতো না বকে চল আগে বাড়ির সবার সাথে আলাপ করাবো। আর শোন সবাইকে প্রণাম করবি কিন্তু৷

-      হুমম্৷

জেঠু জেঠিমা সবার সাথে আলাপের পর প্রতীম বলল"এবার তো ফিরতে হবে৷পিছনের সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় প্রতীম বলল"দেখি জ্বরটা কেমন আছেবলেই ওর হাতটা ধরে নিজের কাছে টেনে নিল৷  পুজা যেন আর তাকাতেই পারেনা চোখ তুলে৷ কেমন একটা লজ্জা,ভয় এসে ঘিরে ধরে ওকে৷
-      "দেখি আমার বউ এর মুখটা দেখি, তাকা আমার দিকে৷" -বলেই জোর করে মুখটা তুলে ধরল পুজার, "আচ্ছা পড়ার ব্যাচে তাকাস না কেন আমার দিকে?"
-         -     আমার লজ্জা করে৷
-         -        ইশশ্৷ লজ্জাবতী আমারমেসেজ- ঝগড়া করার সময় লজ্জা করেনা?
-         -     বেশ করি৷ ঝগড়া করি৷ তুইও তো হাঁ করে তাকিয়ে থাকিস আমার দিকে৷ জানিস স্যার সেদিন হাসছিলেন৷
-        -      তাতে কি রে বুড়িয়া?
-        -     এই আমাকে বুড়ি বললি কেন রে?আমি কি বুড়ি নাকি?
-        -     কেন?সবাই তো ডাকে৷
-         -     সবাই ডাকুক৷ তুই কেনআমি কি বুড়ি নাকি?
-        -     হ্যাঁ তুই আমার পাকা বুড়ি
-        -      তাই তোআমি তো বুড়ি!আমার কাছে এসেছিস কেন তাহলেবুড়িকে কি কেউ ভালোবাসে নাকি?
     " আমি বাসি", বলেই হঠাৎ আরও কাছে টেনে নিয়ে পুজার ঠোঁটটা কামড়ে ধরে প্রতীম৷ পুজার সমস্ত সময়টা যেন একদমকায় থেমে যায় প্রতীমের বুকে৷
-      উমমম্৷
-      এবার মুখটা দেখি৷একী রে...ঠোঁটের তিলটা যে বড় হয়ে গেল৷
-      ধ্যাৎ৷বলেই প্রতীমের বুকের উপর মাথা রাখল পূজা৷

                         হঠাৎ ধাক্কায় সম্বিত ফেরে পুজার৷ বৃষ্টি থেমেছে৷ প্ল্যাটফর্মের শেডের তলায় জমে থাকা ভিড় এবার যে যার বাড়ীমুখী৷ কতক্ষণ যে এভাবে ভিজেছে পুজা৷ মোবইলটা বেজে উঠলঅনির ছবি ভেসে উঠেছে ফোনের ডায়াল স্ক্রীনে৷
-      হ্যাঁ বলো৷
-      কি হলো?কখন থেকে ফোন করছি৷ পৌঁছে গেছো?
-      না৷ বৃষ্টি হচ্ছিল তাই আটকে গেছিলাম, ফোনটা ব্যাগের ভিতরে ছিল তাই বোধহয় শুনতে পাইনি
-      যাকগে...শোনো রাতে কিছু বন্ধুরা আসবে৷ তুমি তোমার মায়ের ওখান থেকে তাড়াতাড়ি ফিরো৷
-      আচ্ছা৷
ছোটবেলার কিছু ভুল বোঝাবুঝি ওর বড়বেলাটাকে পালটে দিয়েছে। ফোন রেখে পুজা এগিয়ে চলে প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে৷ ভেজা প্ল্যাটফর্মটা কিছু স্মৃতি নিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে একই জায়গায়...

Comments

Popular posts from this blog

নারী, তুমি কার?

যাওয়া আসা

অসময়ের গল্প